Friday, May 17, 2013

অভিমানী ভালোবাসা

অভিমানী ভালোবাসা

by Sumyta Mehjabin

রাত ১২:৩০ এর কাছাকাছি বাজে। মধ্য রাতের চাঁদ আকাশে। বারান্দায় বসেছিলাম। ফোন এ রিংএর শব্দে মোবাইলের স্ক্রিন-এর দিকে তাকালাম।একটা নাম জ্বলজ্বল করছে। দেখেই বুকের বাম পাশটায় একটু ভারি ভারি অনুভব করলাম। আজ প্রায় ১ মাস পর অধরা কল দিয়েছে। খুশিতে আমার হার্টবিট বন্ধ হবার উপক্রম। এই একটি মাস আমার কিভাবে কেটেছে বলে বুঝাতে পারবোনা।অধরা বলেছিল ওকে ভুলে যেতে। আমাদের অনেক ভুল বুঝাবুঝি হয়। প্রিয় মানুষের কাছে চাওয়া-পাওয়া গুলো বেশি থাকার কষ্ট ও অনেক বেশি হয়। এভাবে নাকি হয় না।

অধরা বলেছিল যে ও জানে আমি ওকে ইছে করে কষ্ট দিতে চাইনা, তবুও কিছু ব্যাপার এমন হয়ে যায়যে ওকে কাঁদতে হয়। তখন অধরার অশ্রু দেখে আমিও কষ্ট পাই। এভাবে নাকি চলতে পারে না। আমিবার বার বুঝানোর চেষ্টা করেছি যে, সে যেহেতু বুঝতেই পারছে যে বেপার গুলা আমি ইচ্ছা করে করি না তবে কেন আমায় ক্ষমা করতে পারবে না? কেনো ব্যাপার গুলো এড়িয়ে চলে না !! অবোধের মত কথা গুলো বলেছিলাম ঠিক কিন্তু আমি জানি এতো কষ্ট সহ্য করা সম্ভব না। বেশি আবেগী মানুষদের পক্ষে তোহ না ই! আমি ওকে কষ্ট দিতে চাইনা তবুও বার বার কেনো এমন হয় ?!?! সেদিন এরপর থেকে অধরার অনুরোধে ওর কাছ থেকে নিজেকে দুরে সরিয়ে রেখেছি। আমার দিন কেমন কাটছে আমি জানি। এটাও জানি সে ও ভালো ছিলো নাহ।

অধরা কে কিছু বলে বোঝাতে হয়না। আমার সব মনেরকথা ও কিভাবে যেনো বুঝে যায়। আমি বলার আগেই আমি মনে কি ভাবছি, আমার নিরবতা কি বলছে সব বুঝে যায়। এতো ভালভাবে ও আমাকে বুঝে যে আমি নিজেই অবাক হয়ে যাই। আমাদের ভালবাসা গল্প-কাহিনি কে হার মানায়। তা সত্তেও যে দুরত্ব সৃষ্টি হয়েছে তার জন্য আমিই দায়ি। আমিই ওকে এখনও ঠিকভাবে বুঝে উঠতে পারিনি। বোঝার চেষ্টাও কম করিনি। ওকে আমি কিছুটা বুঝি, পুরোপুরি না। অধরা কে আমার এক বিশাল রহস্যের মতো মনে হয়, ওকে পুরোটা বুঝতে পারা আমার পক্ষে কখনই সম্ভব না ।।

মাঝে মাঝে কিছু ব্যাপার বুঝতে পেরে ব্যাপার টা আমি অন্যভাবে নিয়ন্ত্রন করার চেষ্টা করি। সমস্যাটা সেখানেই হয়। হয়তো ও আমার থেকে অন্যরকম আচরন আশা করেছিল। আর আমার কপাল এতো পোড়া ঐ কাজ টা করার সাথে সাথে আমার মাথায় আসে যে 'ধুত! ব্যাপারটা ও অন্যভাবে আশা করেছিল।(এই ব্যাপার টা ও বলার আগেই আমি বুঝে ফেলি)'। ভুল করার পরেই কেনো বুঝি? আগে কেনো বুঝি না, এই ভেবে নিজের উপর খুব রাগ হয়।

ছোট ছোট কিছু ভুল বুঝাবুঝি আর অপূরনতার মাঝে আমি আমাকে হারিয়ে ফেলি। আমার কারনে অধরা কে যখন কাঁদতে হয় তখন নিজেকে খুব অপদার্থ মনে হয়। নিজের কাছেই নিজের মুল্য হারিয়ে ফেলি।নিজেকে অনেক ছোট মনে হয়। আমি কখনই চাইনি ওকেকাঁদাতে, কখনও চাইনি আমার কারনে ওর চোখের এক ফোটা অশ্রুও ঝরুক। ওকে আমি কিভাবে বুঝাবো যে ও কাঁদলে আমার খুব কষ্ট হয়। ওর প্রতিটা কষ্টহাজার গুনে আমার বুকে বাজে। আমার ভিতরটা তখন দুমরে-মুচরে যায়। সব দোষ আমার, আমিই ওকে বুঝাতে পারলাম না। মাঝে মাঝে খুব ইচ্ছে করে ওর কাছ থেকে অনেক দুরে চলে যাই। কিন্তু আমার পক্ষে তা সম্ভব না। ওকে বার বার অনিচ্ছাকৃতভাবে কষ্ট দিতে আমার ও ভালো লাগে না। এই ভয়াবহ কাজটি অধরাই করল। অভিমানী আমার উপর অভিমান করে ১ মাস দুরে সরে ছিল। জানি সে ও ভালো ছিল না।

কল টা রিসিভ করলাম। কয়েকবার 'হ্যালো,'হ্যালো­' করার পরও ওপাশ নিশ্চুপ। আমি সেই কন্ঠস্বর শোনার জন্য প্রতিক্ষায় মোবাইলটা কানের সাথে শক্ত করে ধরে রাখলাম। অবশেষে সেই প্র্তিক্ষিত স্বর --

: ভাল আছো?
: কি মনে হয়?
: মনে হয় ভালোই আছো। আমাকে মনে আছে??
ইচ্ছে করছে বলি, তোমাকে মনে পরেনি এমন একটা দিন ছিল না। তোমাকে কিভাবে ভুলতে পারি? তোমাকে ভোলার জন্য যেই ক্ষমতা দরকার বিধাতা আমাকে তা দেয়নি। কিন্তু এইসব কিছুই বললাম নাজ। শুধু বললাম --

: আমার অস্তিত্বকে আমি কিভাবে ভুলতে পারি? আমার কাছ থেকে দুরে রেখে আমি কিভাবে ভালো থাকতে পারি?
ওপাশে নিরবতা। আমি চোখ বন্ধ করে ধ্যান করার মত সে নিরবতা বোঝার চেষ্টা করছি। ভারি ভারি থমথমে নিঃশ্বাসের শব্দ আর কান্না লুকানোর কঠোর প্রচেষ্টা করে অবশেষে সে বলল--
: জিজ্ঞেস করলে না আমি কেমন আছি?
: নিরবতা যেখানে ভাষার চেয়েও অর্থবহ, নিরবে লুকানো চোখের পানি যেখানে কথা বলে, ভারি হয়েআসা গলার স্বর যেখানে চিৎকার করে সব বলে দেয়সেখানে এই প্রশ্ন জিজ্ঞেস করা কি অনর্থক নয়??
ঐপাশে প্রতিবাদ শোনা যায় --
: এই, আমি কাঁদতেসি না বুঝস??? হমমম!!!!
(আমি জানি ওর ঠোটের কোনে এখন ছোট্ট একটা হাসি)
: আমি তোহ কিছুই বুঝি না,,!!
: বুঝো না তো! বুঝলে তো আর এমন হতো না।
: আচ্ছা মেনে নিলাম আমি কিছুই বুঝি না। তুমি তো সবই বুঝো তবে কেনো দুরে সরে গেলে? জানো তোমাকে ছারা আমি ভালো থাকবো না, জানি তুমিও ভালো থাকবে না। তবে কেনো দুরে চলে গেলে?? কেনো?!!?

মনে মনে ভাবছিলাম ও বলুক, "কই দুরে গেলাম, যাইনি তো!" কিন্তু জানি সে এখন এমন এক কথা বলবে যা শুনে আমি বলার মতো কিছু খুঁজে পাবো না। কিন্তু গলার কাছে এসে হাজারও কথা ছু্টোছুটি করবে। যাইহোক, সে কথা শোনার আশায় কান পেতে রইলাম -

: দুরত্বটা তোমার আর আমার দুইজনেরই জন্যই ভালো ছিল। তুমি আমাকে ইচ্ছে করে কষ্ট দিতে চাও না জানি তবুও আমি কষ্ট পাই। আর তার প্রেক্ষিতে আমার কান্না তোমাকে কষ্ট দেয়। শুধু শুধু কষ্ট পাওয়ার দরকার কি?!?!

বুকের বাম পাশটায় মনে হচ্ছে হাজার ও সুঁই একসাথে বিধে যাচ্ছে। ইচ্ছে করছে অনেক কথা বলি। কিন্তু কিছুই বলতে পারছিলাম না। অনেকগুলো কথা জমে গেলে আমার এমন হয়। অনেক কথা আটকে থাকলে দম বন্ধ বন্ধ লাগে। ওপাশে নিশ্চুপ। আমি জানি অধরা কিছু একটা শোনার আশায় অপেক্ষা করে আছে। আমি জানি

আমার এখন কিছু একটা বলা দরকার। আমি বারান্দায় চাঁদের দিকে তাকিয়ে দারিয়ে ছিলাম। চাঁদটা ক্রমশ ঝাপসা হয়ে যাচ্ছে। খুবঝাপসা! নিঃশাস কিছুটা কষ্ট হচ্ছে। বুক ফেটে কান্না আসছে। ছেলেদের কাঁদতে নেই। অনেক দুঃখে অবশ্য কাঁদতে মানা নেই!

আমার এলোমেলো কথাগুলো হঠাৎ কিছুটা সারমর্ম খুজে পেলো, বললাম --
: অধরা, আর কতটা ভালোবাসলে তুমি আমার হবে? আর কতটা ভালোবাসলে ভুল বুঝাবুঝির অবসান ঘটবে? আর কতটা ভালোবাসলে তোমাকে কাঁদতে হবেনা? আর কিভাবে ভালোবাস্লে নিয়তি মুখ তুলে চেয়ে একটু হাসবে?

আমি তোমাকে হারাতে চাইনা। তোমাকে ছারা আমার চলবে নাহ। আমি জানি আমার অনেক ভুল। ক্ষমা করেদাও। আর একবার সুযোগ দাও। এমন ভুল যেন না হয় সে ব্যাপারে আমি সাবধান থাকবো। তোমাকে আর কাঁদতে দিবো না। প্রতিজ্ঞা করছি!!!
: তুমি এমন আবার করবা। তোমার বার বার ভুল হয়!(ভেজা ভেজা কন্ঠে সে বলল)
: না না, আর ভুল হবেনা। এবার আমি সতর্ক থাকবো।আর এবার যদিও ভুল হয় তবে তুমি যেকোনো কঠিন শাস্তি দিও। শুধু ছেরে চলে যেও না। এক কাজ করতে পারো। শাস্তি হিসেবে আমার পাশে পুরো একদিন বসে থেকো। আমার হাতে তোমার হাত থাকবে। কিন্তু তুমি আমার চেহরা দেখো না। শুধু আমি তোমাকে দেখবো!!

: এটা কোনো শাস্তি হলো?!?
: আচ্ছা, তাহলে একটা ইট নিয়ে আমার মাথায় জোরে একটা বারি দিও।
: না না, এইগুলা কোনো কাজের কথা না।
: আচ্ছা, তাহলে আমার কাছে বেস্ট একটা বুদ্ধি আছে। আবার কোনো ভুল করলে বিয়ে করে তোমাকে সোজা আমার বাসায় নিয়ে আসব,,!
লাজুক হাসি হাসি স্বরে সে বলল --
: আর কোনো কথা নাই না?? তোমাকে আমি বিয়ে করতেযাবো কেনো?!?
: তো কাকে বিয়ে করবা?! ( স্বরটা একটু টান দিয়ে বললাম)
: অন্য কাউকে! ছেলের কি অভাব আছে?!?
আমিও ঝটপট উত্তর দিলাম -
: তাহলে আমিও অন্য কাউকে বিয়ে করবো! মেয়ের তোহ অভাব নাই!!
বলেই জিভে কামর দিয়ে বসে পরলাম। এটা কি বললাম?! এবার তো খবর আছে। ওপাশে লম্বা একটা দম নেয়ার শব্দ হলো। আমার আতমারাম খাঁচা ছারা হয়ে যাচ্ছে, বুঝলাম বিশাল এক ঝরের উপক্রম ,,,,
ইয়া আল্লাহ, এই যাত্রায় বাঁচায় দাও। এবার থেকে কথা বলার আগে ২ মিনিটস ভেবে কথা বলবো। প্লিজ আল্লাহ প্লিজ ,,,

No comments:

Post a Comment