Friday, May 17, 2013

বিভ্রম


বিভ্রম

By- Titly Pixie

স্যার আমাকে ডাকেন কালি নারায়ণ বলে।আমি একটু বাড়াবাড়ি রকম ভালো ছাত্র।চশমার পাওয়ার বেড়েই চলছে।সারাক্ষণ ক্লাস আইটেম ওয়ার্ড...আমার দম ফেলবার ফুরসত নেই।আম্মু অনেক বড় ডাক্তার্।আমার একটাই স্বপ্ন আমি আম্মুর মত হব।
সেদিন আম্মু কে ক্লিনিক থেকে নিয়ে আসতে গিয়েছি।একটা অপারেশন ছিল।দেখলাম আম্মুর বেশ মন খারাপ।জানতে চাইলাম কেন।আম্মু পাল্টা প্রশ্ন করল
"তুই স্বাতী কে চিনিস?"
"চিনবনা কেনো?আমাদের সাথে পড়ে"
"ওর মা মারা গেছেন আজকে,breast cancer ছিল,পরে liver carcinoma হয়"
আমার বুকটা কেমন খালি হয়ে গেলো।কি অদ্ভূত!আমার সমান একটা মেয়ে,ওর আম্মু নেই!!বাঁচবে কি করে ও!!
স্বাতী অনেকদিন কলেজে আসেনা।আমার মন খারাপ লাগছে।ফোন নাম্বারও নেই যে ফোন করে একটু সান্ত্বণা দিব।১১দিন পর স্বাতী আসল।আমি কথা গুছিয়ে গেলাম ওর কাছে।সবাই ওকে সান্ত্বনা দিচ্ছিল।ভাবলাম ছুটির পর বলি।ছুটি হয়ে গেলো।স্বাতী কে খুঁজে পেলামনা।খুব বিরক্ত লাগল।সামান্য ব্যাপার নিয়ে এত অস্থির হওয়ার কি আছে।আবার সামান্যও লাগছিলনা।অস্বস্তি লাগছিল।
পরদিন বারান্দায় পেয়ে গেলাম ওকে।পাশে দাঁড়িয়ে নরম সুরে বলার চেষ্টা করলাম গোছানো কথাগুলো।ও মাথা তুলে তাকাল আমার দিকে।আমি হলফ করে বলতে পারি এত সুন্দর মেয়ে আমি জীবনে দেখিনি।এত বিষাদ মাখা চোখ আর কারো আছে বলে আমি জানিনা।হঠাত আমার sympathetic system এর তান্ডব শুরু হয়ে গেলো।আমার ভেতর থেকে কেউ চিল্লিয়ে বলছিল "চোখ নামাও স্বাতী,আর না" ও হয়ত কিছু বলল আমাকে,শুনতে পেলামনা।হতবাক হয়ে দাঁড়িয়ে রইলাম।লক্ষ করলাম আমি ওকে ফলো করছি।ক্লাসে,লাইব্রেরীতে,fb তে...এক দুর্বোধ্য আকর্ষণ।মাথা থেকে ঝেড়ে ফেলব,পারছিলামনা।ও সিঁড়ি দিয়ে উঠছে আমি পেছন পেছন যাচ্ছি।ওর নাম্বারে ফোন দিয়ে কানে ধরে রাখছি।ওপাশ থেকে হ্যালো হ্যালো করে স্বাতী ফোন কেটে দিচ্ছে।আমার কোনো বিকার নেই।কেউ ধরতে পারছেনা আমার কি হচ্ছে,আমার চারপাশটা বদলে যাচ্ছে।assignment লিখতে গিয়ে পৃষ্ঠার পর পৃষ্ঠা লিখে যাচ্ছি স্বাতী স্বাতী স্বাতী...
"তুমি আমাকে ফলো করছ রাতুল??"শান্ত ভংগীতে স্বাতীর প্রশ্ন।
"তুমি সাদা জামা পড়েছ কেনো স্বাতী??তোমাকে মেঘের মত দেখাচ্ছে।"মনে মনে বলছি আমি।
আবারও একই প্রশ্ন করল স্বাতী।
"আমি তোমাকে বিয়ে করতে চাই স্বাতী।"আমার উত্তর্।
সেদিনের মত আবার একবার চোখ তুলে তাকাল স্বাতী।তারপর আর কোনোদিন তাকায়নি।আমি স্বাতীর কাছ থেকে বেশ লম্বা একটা চিঠি পেয়েছিলাম ৩ মাস পর্।মাঝখানে অনেকবার কথা বলার চেষ্টা করেছি আমি।ও বলেনি।
স্বাতী চিঠিতে বলেছিল ওর একবার বিয়ে হয়েছিল।ডিভোর্স হয়ে গেছে।চিঠিটা পেয়ে অদ্ভূত এক অভিমান হয়েছিল আমার্।সেদিন বালিশে মুখ গুঁজে অনেক কেঁদেছিলাম।স্বাতী কি জানে আমার ৩ মাস কি করে কেটেছিল?কতভাবে ব্যস্ত থাকার চেষ্টা করেছি আমি।আমি যে ঘুমাইনি।পৃষ্ঠার পর পৃষ্ঠা শুধু লিখেছি স্বাতী স্বাতী স্বাতী...
আমি আমার কাছে হার মেনেছিলাম।১ সপ্তাহ পর ওর কাছে গিয়ে বলেছিলাম "তুমি আমার পাশে থাকোনা স্বাতী।আমার কোনো অভিযোগ নেই তোমার অতীত নিয়ে।"
স্বাতী সেদিন মুখ ফিরিয়েছিল।সইতে না পেরে আম্মুকে বলেছিলাম।অবুঝ শিশুকে যেমন বোঝায় আম্মুও আমাকে ওরকম বুঝিয়েছিল।divorcy মেয়ে কিছুতেই ছেলের বউ হবেনা।কেউ বোঝেনি কতটা ভেঙ্গে পড়েছিলাম আমি।আগের মত মেধাবী,ভদ্র আর অনুগত ছিলাম যে।mbbs এর পর স্বাতী বাইরে চলে যায়।আমাদের আর কখনো দেখা হয়নি।
আর কখনো সেদিনের মত আমার heart rate বেড়ে যায়নি।আমার heart আমার মতই অভিমানী।স্বাতী খুব শক্ত মেয়ে ছিল,উত্তাল সাগরের ঢেউয়ে ভাসেনি।আর ও ভাসবেনা বলে আমার সাগরেও আর কখনো ঢেউ ওঠেনি।
আমার মেয়ে তিশা।আমি ভাবি এইই বুঝি স্বাতী।আমি তো ওকে পাশে চেয়েছিলাম।হয়ত আমার আদরের মেয়ে হয়ে এসেছে।
আমি আমার মেয়েকে নি:শ্বাস বন্ধ করে ডাকি তিশা তিশা তিশা তিশা তিশা তিশা...ও দৌড়ে আসে।আমি ভাবি হ্যাঁ এইতো স্বাতী,ছোট্ট স্বাতী।

part-2

সেদিন স্বাতী এসেছিল।তখন রাত দুটার মত বাজে।আমার ইনসমনিয়ার মত হয়েছে।রাতে ঘুম হয়না।স্বাতী স্বাভাবিক ভঙ্গিতে কফি বানিয়ে নিয়ে এল।কত গল্প করল।আগের কথা বলল।ওই যে ওর মা মারা গেলেন,উনি নাকি ওর স্টেপ মা ছিলেন।ওকে আদর করতেননা।কেউ কখন ওকে ভালোবাসেনি বলতে বলতে ওর চোখ জলে ভরে উঠেছিল।আমি শুধু শুনে যাচ্ছিলাম।অনেক কিছু বলার ছিল।কিন্তু তখন আর বলে কি হবে।
রুমনি যতদিন ছিল স্বাতী কে আমার অত মনে পড়তনা।রুমনিকে বলেছিলাম স্বাতীর কথা।ও শুধু হেসেছিল।আমার মেয়ে তিশা,বেশ বড় হয়ে গেছে।বাইরে mbbs পড়ছে।রুমনি মারা গেছে যখন তখন তিশা mbbs 1st ইয়ার্।তারপর খুব একলা হয়ে পড়েছি আমি।রুমনি খুব ভাবত মেয়ের বিয়ে ধুমধাম করে দিবে।
আমি জানি আমার একাকীত্ব ঘোচাতে স্বাতী আসেনি।এই যে প্রতিদিন তাকে দেখছি,সে সারাক্ষণ আমার সাথে থাকছে।সবই আমার মনের ভুল।একে প্রশ্রয় দেয়া ঠিকনা।কিন্তু তবু...স্বাতী কে হারিয়ে ফেলতে খুব কষ্ট,একবার হারিয়ে বুঝেছি।থাকুকনা।আমার বেশ ভালো লাগে।স্বাতী অনেক গল্প করতে জানে।সবচেয় বেশী গল্প করে তিশার বিয়ে নিয়ে।
কালকে আমি আর স্বাতী বসে টিভি দেখছিলাম।স্বাতী টিভি দেখছিল,আমি ওকে দেখছিলাম।বেশ শুকিয়ে গেছে স্বাতী।চোখের নিচে কালি পড়েছে।তবু আগের চেয়ে যেনো আরও সুন্দর লাগছে।কি আশ্চর্য!রুমনি আমাকে এত ভালোবাসত,আমার রুমনি কে এখন মনে পড়েনা।আমার জীবনটা আমার স্বাতীময় হয়ে উঠেছে।
ভীষন পাগলামী করছে ইদানীং স্বাতী।শুধু মরে যেতে চায়।সেদিন গাড়ী থেকে নেমে গেল ট্রাকের নিচে ঝাপ দেবে বলে।চলন্ত গাড়ী থেকে এত সহজে নামল কি করে ও!আমার স্পষ্ট মনে আছে।আমি গাড়ি চালাচ্ছিলাম।আর ও নেমে গেল।পরে গাড়ি থামিয়ে ওকে রাস্তা থেকে ধরে এনেছি।কি বিচ্ছিরি!আমি আর কিছুতেই হারাতে চাইনা স্বাতীকে।
'স্বাতী,তোমার কিসের কষ্ট?বল আমাকে?'
সেদিনের মত চোখ তুলে তাকাল স্বাতী।যেনো খুব অভিমান আমার উপর্।বলল 'তুমি আমাকে আটকে রাখলেনা কেনো??'
শুনে আমার কি ভীষন কষ্ট হলো।বললাম 'আর কখনো তোমাকে যেতে দিবনা স্বাতী,কখখনো না।'
কত বোঝাই স্বাতীকে,ও শুনেনা।এক হাত দিয়ে গাড়ি চালাই অন্য হাতে ওকে ধরে রাখি।তবু আমার হাত থেকে ছুটে নেমে যায়।কি করব আমি।অসহায় লাগছে খুব।
আর কিছু লেখা ছিলনা ডায়েরিটায়।এটুক পড়েই তিশার বুঝতে কষ্ট হয়না তার বাবা আত্মহত্যা করেনি।স্বাতী নামে কাল্পনিক কাউকে বাচাতে গিয়ে....ভীষণ কষ্ট হয় তিশার্।এই স্বাতীকে ও খুজে বের করবে।যদি স্বাতী বেচে থাকে,পৃথিবীর যেখানেই থাকুক ও খুজে বের করবেই।ডায়েরীটা ব্যাগে নিয়ে বেরিয়ে পড়ে তিশা।

No comments:

Post a Comment